লা শরিক আল্লা

হক এবং ডিউটির রিশতা
শমাজের পোরতি ব্যক্তির ডিউটি আছে, আবার শমাজের কাছে ব্যক্তির হকও আছে। ব্যক্তির হকের ভায়োলেশন ঘটলে ব্যবস্থা নিতে হবে শমাজের। ব্যক্তির ডিউটির ব্যাপারেও তাই। মা-বাপের খেদমত করা বা এমনকি নিজের বাছুর পালন–এইগুলা আশলে বুড়া মানুশ এবং বাচ্চাদের হক, শমাজের কাছে, ব্যক্তির কাছে না; ঐগুলা করার ভিতর দিয়া ব্যক্তি আশলে শমাজের পোরতি তার ডিউটি পালন করে। এই পুরা ব্যাপারটা তদারকির কাম শমাজ দিছে রাশ্টের হাতে বা রাশ্টোই হয়তো ঐ তদারকির কছম খাইয়া শমাজের হাত থিকা ছিনাইয়া নিয়া নিছে!
শমাজ-রাশ্টের ডায়ালেক্টিক্স জেমনই হৌক, ঐ কামে রাশ্টো দরকার আছে, কেননা, শমাজ ফর্মাল রাস্তায় কাম করে না ততো, বা ফর্মাল হইয়া ওঠার নামই রাশ্টের হইয়া ওঠা! ফর্মালিটি বাদেও বড়ো আরেকটা কারন আছে: শমাজের ভিতর শমাজ থাকে, ধর্ম-কালচারের ফারাকের কারনে বহু বহু কনফ্লিক্টিং মোরাল কোড থাকতে পারে শমাজে; তাই একটা কমন গেরাউন্ড দরকার হয়, নাইলে ক্যাওছ ঘটে, ইনছাফের বদলে গায়ের জোরের শাশন কায়েম হবার শম্ভাবনা বাড়ে, জুলুমের এস্পেছ পয়দা হয়/বাড়ে।
পাপ এবং কেরাইম
ইনছাফ কায়েম করার মানে বাছবিচার করা, হরেক ডিছিশন লওয়া। ডিছিশন জে কেউ নিতে পারে না, ডিছিশন নিতে আজাদি দরকার হয়, লেজিটিমেছি-এখতিয়ার লাগে। আজাদি-লেজিটিমেছি-এখতিয়ার, এই তিনটা জিনিশ এক লগে একটা টোটাল প্যাকেজ আর শেই প্যাকেজটার নাম দিতে পারি আমরা, ‘ছভ্রেইনটি’।
ছভ্রেইনটি আবার ২ কিছিমের: একটা খোদায়ি, আরেকটা শেই খোদারই রহমতে পাওয়া মানুশের। দিন-দুনিয়ার বেশিরভাগ জিনিশই মানুশের এখতিয়ারের বাইরে, জেমন ধরেন গেরাভিটি বা ছোলার ছিস্টেম বা এস্পেছ-টাইম, এমনকি পিথিবির হাওয়া বা পানিদের ঢেউ; ফলে মানুশের ছভ্রেইনটি খুব লিমিটেড, মানুশ বেশ পুচকে!
পশুদের ভিতর বা এনিমেল ওয়ার্ল্ডে জুলুম নাই; ঐখানে শক্তিমানের মর্জির শাশন, খুন ঘটে, খেদাইয়া দেয়, মাইরা ফেলে, অপরের–কখনো বা নিজেরও মাছুম বাচ্চা খাইয়া ফেলে পশুরা–তবু জুলুম ঘটে না! ঘটে না, কেননা, পশুর বিবেক নাই, আল্লার এই আরেকটা রহমত পশুরা পায় নাই, গায়ের জোরই পশুর ধর্ম।
জুলুমের আলাপ তাই ছেরেফ মানুশের বেলায় খাটে, ঐ পুচকে মানুশই মানুশের উপর জুলুম করে, করতে পারে, পশুর উপর করতে পারে। মানুশের বিবেক আছে বইলা মানুশের কাছে অপরাপর মাকলুকাতের হক আছে, পয়দা হয় হক আছমানি ইশারায়, আর শেই হক মারার নামই জুলুম; গায়ের জোরের শাশনের বদলে তাই বিবেকের শাশন, গায়ের জোরের বদলে ইনছাফ। মানুশের শমাজে ইনছাফ থাকতে হবে, শেই ডিউটি মানুশেরে দিছেন খোদা।
কিন্তু বিবেক থাকলেই ইনছাফ কায়েম করা জায় না, ইনছাফ কায়েম করতে হইলে ফয়ছালা করা লাগে; শমাজ জিবন আর দুনিয়াদারির জটিল শব মামলার ফয়ছালা করতে মানুশেরে খোদা আরো একটা রহমত দিয়া রাখছেন এবং তার নাম আক্কেল।
হকের ভায়েলেশন বা খেলাপে পয়দা হয় জুলুম; জুলুম মানে কেরাইম, তখন শেই কেরাইম বা জুলুমের বিচার কইরা ইনছাফ কায়েম করার ডিউটি মানুশের শমাজের এবং শেই বিচারে মানুশ এস্তেমাল করবে আক্কেল এবং বিবেক। এই পুরা পোছেছটারে আমরা একটা নামে ডাকতে পারি, এবং তার নাম ডিছিশন মেকিং, শিদ্ধান্ত লওয়া, জাজমেন্ট দেওয়া। দুনিয়ায় ইনছাফ কায়েম করতে খোদা মানুশেরে জেই আক্কেল এবং বিবেক দিছেন, তার ভিতর দিয়া তিনি মানুশেরে দুনিয়াবি ডিছিশন নেবার এখতিয়ার দিছেন। শেই কারনেই মরনের পরে বেহেস্তো আর দোজখের এন্তেজাম রাখছেন খোদা। আর এই ডিছিশন নেবার এখতিয়ারের নামই ২ নাম্বার ছভ্রেইনটি; দুনিয়া হইলো মানুশের ছভ্রেইনটি চর্চার পরিক্ষা– ভালো অথবা খারাপ ডিছিশন লইবার ভিতর দিয়া খোদার পরম ছভ্রেইনটির আদালতে মানুশ পাশ করবে কিনা, তা নির্ভর করে মানুশ তার ছভ্রেইনটি বা এখতিয়ারের চর্চা ঠিকঠাক করলো কিনা, এখতিয়ারের লিমিট পার হইয়া গেলো কিনা, তার উপর।
মানুশের ছভ্রেইনটির লিমিট ভায়োলেট কইরা খোদার ছভ্রেইনটির ভিতর ঢুইকা জাওয়া এক কিছিমের শেরেকি হবার কথা, তারই নাম নমরুদ হইয়া ওঠা; একজন নমরুদ তখন লিমিটলেছ ভাবে নিজেরে, জালেম হইয়া ওঠে, তারই নাম টাইরানি।
ছো, আমরা জুলুম এবং কেরাইম পাইতেছি আরামেই এবং দেখতেছি জে, তা বেশ শামাজিক ব্যাপার–মানুশের কাছে জে কোন মাকলুকাতের হকের ভায়োলেশন। তাইলে পাপ কি?
পাপ হইলো মানুশের বিচারের বা ছভ্রেইনটির শিমার বাইরের ঘটনা, একান্তভাবেই খোদায়ি বা আছমানি ছভ্রেইনটির মামলা–ব্যক্তি মানুশের লগে একান্তই খোদার রিশতা। পাপ হইলো আল্লার বান্দা হিশাবে তার শোকর গুজার না করা, মালিকের মালিক শেই পরম মালিকের এবাদত না করা। আল্লা তার কঠোর বিচার করবেন; শেইটা আল্লা জানাইছেন তার কেতাব আর রাছুলের মারফতে। হুশিয়ার।
শেরেকির শম্ভাবনা
ধরেন, আপনে জেই শমাজে আছেন, তার ৯০% মানুশ মোছলমান। রোজার দিন শুরু হইলো। বাকি ১০% তো বটেই বহু মোছলমানও হয়তো রোজা থাকতেছে না। ফলে দুপুরের খাবারের একটা বিজনেছ শম্ভাবনা আছে। তাই একজন রোজাদার মোছলমানই হয়তো একটা হোটেল দিলো, বেরোজদাররা দুপুরে ভাত খাইতেছে হোটেলে।
এই ঘটনা দেইখা আপনের পছন্দ হইলো না, একটা পাপের কারবার চলতেছে বইলা আন্দাজ করলেন, কি করবেন আপনে?
হোটেলের মালিকের মা-বাপের মেডিছিনের খরচ ধরেন মাশে ৩০ হাজার টাকা, রোজার পরে ইদ, বউ-বাচ্চারে দুইটা ভালো কাপড় দিতে হবে ইদে, মেহমান আশবে ইদের দিন, একটু ভালো বাজার করতে হবে। ঐ লোক তখন খোদার দরবারে ফরিয়াদ করলো–হে আল্লা, আমারে জেই ডিউটি তুমি দিছো, তা পালন করতে হইলে দুপুরে ভাতের ব্যবশা ছাড়া উপায় নাই আমার, আমি রোজা থাকতেছি, কিন্তু বেরোজদারদের দুপুরে ভাত খাওয়াইয়া কামাই করতে হইতেছে আমার, পাপ হইলে তুমি মাফ কইরা দিও!
এই জে জটিল ঘটনা, এর বিচার মানুশের আক্কেল আর বিবেক কিভাবে করবে?! আপনে ৯০%’র শক্তিতে বলিয়ান, আপনে হোটেলে আগুন দিয়া দিতে পারেন, মালিক বা খদ্দেরগুলারে মারতে পারেন, মাত্রই জে ভাত খাইলো ঐ হোটেলে, ভাংচুরের কামে তারেও পাইতে পারেন লগে। ভাংচুর শুরু করবেন?
আমার আক্কেল আর বিবেক কয়, ঠিক হবে না; ওনার পাপ হইতেছে কিনা, আমি জানি না, শেইটা মানুশের বিচার তথা ছভ্রেইনটির এখতিয়ারের আওতার বাইরে, আছমানি ছভ্রেইনটির মামলা ঐটা। ঐটা পাপ হইলেও তার শাজা খুব কমাইয়া দিতে পারে আল্লা, এমনকি মাফও কইরা দিতে পারে। মানুশ জেই পানিশমেন্ট দেবে, তা জদি বেশি হয়, তাইলে ঘটনাটারে কেমনে বিচার করবে আল্লা? বা আল্লা জদি মাফই কইরা দেয়, আর আপনে অলরেডি পানিশমেন্ট দিয়া দিছেন, তখন? তখন আশলে জুলুম হইলো, আপনে করলেন, আল্লার ছভ্রেইনটির ভিতরে ঢুইকা গেছেন আপনে, চরম বেয়াদবি করছেন! জেই ব্যাপারে ডিছিশন নেবার এখতিয়ার একান্তই আল্লার, আপনার নাই, শেই ব্যাপারে ডিছিশন লইয়া আপনে নমরুদ হইয়া পড়ার ঝুকি নিলেন, শেরেকির শম্ভাবনা ঘটাইলেন!
ওদিকে, ঐ হোটেল মালিক পাপের শিমানা পার হইয়া বা আল্লার ছভ্রেইনটির আওতার বাইরে জাইয়া মানুশের ডিছিশন মেকিং বা ছভ্রেইনটির এরিয়ার ভিতরেও ঢুইকা জাইতে পারে! কখন? জদি শে মানুশেরে খোদার এবাদত থিকা বাইরাবার দাওয়াত দিতে থাকে: ধরেন, মাইকে কইলো জে, রোজা ভাংলে ভাতের দামে ২০% কমিশন দেবে শে! তখন শেইটা শামাজিক হইয়া উঠলো পুরা, দাওয়াতি হইয়া উঠলো, তখন শে শমাজের বিপক্ষে একটা কেরাইম করলো। শমাজ তারে তখন রাশ্টের মারফতে পানিশমেন্ট দেবে, কেননা, শে শমাজের/মানুশের ছভ্রেইনটির এলাকায় ঢুইকা পড়ছে, কেরাইম ঘটাইছে শে।
ফলে, পাপ এবং কেরাইমের তফাত বোঝার ব্যাপার আছে; কারো কোন পাপ কেরাইম হইয়া উঠতে পারে, আবার ছেরেফ পাপই হইতে পারে। অমন আরেকটা ধরেন, নামাজ না পড়া; পাপ হইলো, কেরাইম হইলো না; আবার হবে, জদি শে নামাজ না পড়ার দাওয়াত দেয় শমাজে; শমাজ তখন ব্যবস্থা নিতে চাইতে পারে। তখন আক্কেল আর বিবেক এস্তেমাল কইরা শমাজ ডিছিশন নেবে জে, তার/মানুশের ছভ্রেইনটির এরিয়ার ভিতর পড়তেছে কিনা ব্যাপারটা।
আমাদের বোঝাবুঝির ঘাটতি থিকা আমরা পাপের বিচারে নামি কখনো কখনো, কেরাইমের আওতা বড়ো কইরা ফেলি, খোদার এখতিয়ারে নাক গলাই, তখন শেরেকির শম্ভাবনা পয়দা হয়, না বুইঝাই হয়তো নমরুদ হইয়া উঠি আমরা!
হকের লিমিট
জে খাইতে নারাজ, তারে খাইতে বাদ্ধ করলে কি জুলুম ঘটে? আপনের ইচ্ছায় অপরের জেই জিন্দেগি, তারই নাম গোলামির জিন্দেগি। অপরকে খাওয়ানো একটা গুন, এবং শেইটা তখনই গুন জখন শে খাইতে চায়, বা রাজি। ফলে আপনের না, শেই অপরের ইচ্ছা বা রাজি হওয়াটাই আশল ঘটনা। ফলে খাইতে বাদ্ধ করা জুলুম (এমনকি প্যারেন্টিং-এ জেই খাওয়ানো, শেইটাও একটা উচ্চতর নৈতিক বিচারের ভিতর দিয়া ডিছিশন লইতে হবে, কখন এবং কতোটা জোর করা জাবে, তারো লিমিট আছে আলবত!)।
আবার ছাফ-ছুতরো থাকা ইছলামে ইমানদারির পাট; কিন্তু কেউ জদি ময়লা থাকে, ইমানে অবহেলা করে, আপনে কি তারে জোর কইরা ইমানদার বানাইতে পারবেন? এখতিয়ার আছে আপনার?
আপনের মনে হইতে পারে জে, অপরের ইমানের তদারক করা আপনের ডিউটি! কিন্তু না; আপনের ডিউটি আপনের ইমানের ব্যাপারে, অপরের ইমান খোদ আল্লার লগে তার মামলা, শেইখানে আপনের নাক গলানি মানে আছমানি ছভ্রেইনটির উপর আপনের হামলা! ফলে, আপনে জেইটারে হয়তো ইমানদারি আর ছোয়াব হাছিল করা ভাবতেছেন, শেইটা আশলে হয়তো শেরেকির শম্ভাবনা!
শমাজের কাছে ব্যক্তির হক আছে, এমনকি ময়লা থাকার হক! তা জদি এতোটা বাড়াবাড়ি হয় জে, শমাজের কোন খতি হইতেছে, শমাজ তখন নাক গলাইতে চাইতে পারে, নাক গলাবার ডিছিশন লইতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির কোন হক জদি মুলতবি রাখতে হয়, শেইটা ধাপে ধাপে পরখ করার ব্যাপার আছে, ডিউ পোছেছ আছে! হুশিয়ার থাকতে হয়, নমরুদ হইয়া উঠতেছে কিনা শমাজ, আছমানি ছভ্রেইনটিতে হামলা ঘটতেছে কিনা, শেরেকির শম্ভাবনা পয়দা হইতেছে কিনা–খুব খেয়াল রাখা দরকার। কিন্তু মামলাটা অন্তত শমাজের এখতিয়ারের, ফয়ছালার ভার রাশ্টের; আপনে নালিশ করতে পারেন শমাজের দপ্তরে, কিন্তু আপনেই শমাজ না, আপনে হইলেন জাস্ট একটা আপনে!
#রকমশাহেরতুলা //২৮ছেপ্টেম্বর২০২৫
See also  পলিটিকেল বাশনার মায়ের নাম ইতিহাশ

comment/ফতোয়া

Translate »